হলিউডের প্রযোজক হার্ভি ওয়াইনস্টাইনের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ দিয়ে শুরু হয় #মিটু আন্দোলন।
নারীবাদীরা এই আন্দোলনকে নারীর প্রতি যৌন নিগ্রহ নিয়ে এক বিশ্বব্যাপী আন্দোলনের আখ্যা দিচ্ছে ।
হলিউডের নায়িকা অ্যাশলে জুড অভিযোগ করেছেন যে তিনি পেশাগত কারণে দেখা করতে গিয়েছেন মিরাম্যাক্স স্টুডিওর কর্ণধার হার্ভি ওয়াইনস্টিনের সঙ্গে। বেভারলি হিলসের এক পাঁচতারা হোটেল রুমে হার্ভে দ্বারা যৌন নিগ্রহের শিকার হন তিনি ।
এর পর হার্ভের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ আনে হলিউডের একাধিক পেশাজীবী নারী ,যাঁদের মধ্যে অন্যতম রোজ ম্যাকগাওয়ান ও এশিয়া আর্জেন্টোর মতো অভিনেত্রীরাও।
এই বিষয়ে ৫ অক্টোবর ও ১০ অক্টোবর ২০১৭ প্রকাশিত দ্য নিউইয়র্কার দুটি প্রতিবেদন ।
এরপর ১৬ অক্টোবর ২০১৭,অভিনেত্রী অ্যালিসা মিলানো নিজের টুইটার অ্যাকাউনটে লিখলেন, ‘আপনিও যদি এমন যৌন নিগ্রহ ও নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকেন কখনো, তবে এই টুইটের উত্তরে লিখুন মিটু—আমিও!’
এর পরেই শুরু নাকি শুরু #মিটু আন্দোলন ।
কিছু লোকের বক্তব্য এই আন্দোলন শুরু হয় এই ঘটনার অনেক আগে। সমাজকর্মী তারানা ব্রুক প্রথম ২০০৬ সালে শুরু করেছিলেন এই আন্দোলন। তুমি একা নও, আমিও আছি—এই ছিল তাঁর বার্তা। #মিটু নামে এক তথ্যচিত্র নির্মাণ করেছিলেন তিনি।
বস্তুতঃ মি টু আন্দোলন একটি মেকি আন্দোলন।
পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পরে নারীবাদীরা খুব একটা সুবিধা করতে পারছিল না। নারীবাদীরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও রাষ্ট্রপুঞ্জকে ব্যবহার অপেক্ষাকৃত কম ক্ষমতাবান দেশের উপর নারীবাদী ভাবনা চাপিয়ে দেওয়ার জন্য।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্প ক্ষমতায় আসায় তা আর সম্ভব হচ্ছে না। তাই নারীবাদীরা একাট্টা হয়েছে ট্রাম্প বিরোধিতা করার জন্য।
কিছুদিন আগে মার্কিন দেশে ট্রাম্পের মনোনীত বিচারপতি বিচারপতি ব্রেট ক্যাভানা নিয়োগ নিয়ে তুমুল ঝড় উঠলো।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চতম আদালতে বিচারক সরাসরি রাষ্ট্রপতি ও সেনেটর দ্বরা নিযুক্ত হয় । তাদের সংখ্যা মাত্র নয়টি এবং তাদের নিয়োগ অবসর অব্ধি আজীবনের জন্য হয়। এর অর্থ হল কোন বিচারপতির নিয়োগ আমেরিকার নীতি ও ন্যায়বিচারের উপর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে। ব্রেট ক্যাভানা বিচারপতি হলে উচ্চতম আদালতে নারীবাদের পাল্লা বিপরীত দিকে ঝুকে যাবে এই ভয়ে তারা তার নিয়োগের বিরোধিতা করতে লাগলেন। তার বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ আনা হয় ।
হাই স্কুলে পড়ার সময়ে ব্রেট তাঁকে যৌন হেনস্থা করেছেন বলে অভিযোগ করেছিলেন ক্যালিফোর্নিয়ার অধ্যাপিকা ক্রিস্টিন ব্লেসি ফোর্ড। একই অভিযোগ আনেন আরও দুই মহিলা। সেনেটের ভোটে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর শেষ পর্যন্ত জিতে যায় রিপাবলিকানরা। জয় হয় ব্রেটের।
রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তরুণ পুরুষদের জন্য এখন “কঠিন” এবং “ভয়ঙ্কর” সময় চলছে।
পৃথিবী জুড়ে নারীবাদকে পুণঃ উদ্দীপন করার জন্য দরকার ছিল একটি জোরালো আন্দোলন বা উন্মাদনা । তাই এই #মিঠু আন্দোলনের সূচনা করেন নারীবাদীরা।
আপনি হয়তো ভাবছেন যে সত্যিকারের নিপীড়িত মহিলারা এ আন্দোলন অংশীদার। একটু গভীরে দেখলেই দেখা যাবে যে কিছু স্বার্থান্বেষী,ব্যভিচারী মহিলারা সমাজের শক্তিশালী, সফল, ধনাঢ্য পুরুষদের আক্রমণ করছে সহজে যশ ও অর্থ লাভ করার জন্য।
আবার কিছু মহিলা আছে যারা চলচ্চিত্রের পদ্মায়, সাংবাদিকতায় কিংবা রাজনীতিতে তেমনি নাম করতে পারেননি। তাই নিজেদের জীবিকাকে পুনরুদ্ধার করার জন্য তারা #মিটু কে বেছে নিয়েছেন ।
এই সকল সমাজের প্রান্তিক মহিলারাই এই আন্দোলনের পথিকৃৎ।
পাশ্চাত্যে শিক্ষায় শিক্ষিত ভারতীয় মধ্যবিত্তদের বেশি সময় লাগেনি পাশ্চাত্যের অনুকরণ করতে। তাই ভারতবর্ষে শুরু হয়ে যায় #মিটু আন্দোলন ।
এই আন্দোলনের ফলে ভারতবর্ষে একের পর এক রথী-মহারথী ধরাশায়ী হচ্ছে। একজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ইস্তফা দিতে বাধ্য হয়েছেন ।
ভারতবর্ষে পুরুষ অধিকার কর্মীরা #মিটুর বিরোধিতা করে কারণ তারা মনে করে:-
- যদি একটি নারীর অভিযোগই যথেষ্ট হয় একটি পুরুষ কে অপরাধী চিহ্নিত করার জন্য তবে আদালত ও আইন ব্যবস্থা কি কোন প্রয়োজন আছে?
- ইংরেজদের ধাঁচে বর্তমান বিচার ব্যবস্থায় ধরে নেওয়া হয় যে একজন ব্যক্তি নির্দোষ যতক্ষণ না তার বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণ করা হচ্ছে। কিন্তু এই আন্দোলনে একজন পুরুষকে অভিযোগ করার সঙ্গে সঙ্গে দোষী চিহ্নিত করা হচ্ছে এবং পুরুষের উপর দায় হচ্ছে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করা ।
- সংবিধান আইনের আশ্রয় লাভ, আইন অনুযায়ী ব্যবহার লাভ, বিচার লাভ, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ লাভ, অপরাধী-নিরপরাধী নির্বিশেষে প্রতিটি নাগরিকে মৌলিক অধিকার প্রদান করে । এরকম কোন সুবিধা দিতে চান না #মিটু আন্দোলনকারীরা। তাদের মতে নারীর বাক্যই শেষ বাক্য। নারী যদি বলে দিয়েছেন পুরুষ অপরাধী তবে সে অপরাধীই।
- #মিটু ইন্টারনেটের গণপিটুনির সমান। একদল নারী একটি পুরুষের সামাজিক মর্যাদা,পেশা সবকিছু ধ্বংস করে দিতে পারে শুধুমাত্র অভিযোগের ভিত্তিতে ।
- পুরুষ ও কি যৌন হেনস্থার শিকার হন না? তবে পুরুষ কেন পারবেনা #মিটু র মত আন্দোলনের মাধ্যমে কোন নারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে?
- এদিকে নারীবাদীরা যৌন স্বাধীনতার কথা বলেন। অপর দিকে তারা মিঠু মত আন্দোলন চালিয়ে অযাচিত প্রণয়কে দণ্ডিত করতে চায়।
এইসব কারণে পুরুষ অধিকার কর্মীরা মনে করেন যে এই নারীবাদী আন্দোলনের আশু-অবসান হওয়া উচিত ।